January 8, 2025, 9:50 pm
স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে বোরো ধানে দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। এতে জমির ধান নস্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে উফসি-২৮ জাতের ধানে এর প্রকোপ বেশি। রোগের প্রভাবে ধান চিটা হওয়ায় অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। সেই সাথে ধান নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় করা হচ্ছে। তবে কৃষকের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করতে না পারলেও, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বোরো মৌসুমে এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাতের বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। তবে চাল সরু ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় কৃষকেরা হাইব্রীড জাতের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের বোরো ধানের আবাদ করেন কৃষকেরা। কিন্তু জেলার বিভিন্ন ধানের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় ধানের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। যেসব জমিতে উফসি-২৮ জাতের ধান রোপন করা হয়েছে সেখানে ধানের শীষ আসার সাথে সাথে তা পুড়ে গিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে ইঁদুর গাছের গোড়া কেটে দেয়ায় নষ্ট হচ্ছে ধান গাছ। এতে ক্ষতি মুখে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার কৃষক। ধার দেনা করে বোরো ধানের আবাদ করেছেন কৃষকেরা। ধান নষ্ট হওয়ায় ধার দেনা শোধ করবেন কিভাবে সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। ধান নষ্ট হওয়ায় সারা বছর খাদ্যের যোগান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানাগেছে, এ বছর জেলায় প্রায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৫৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর, উফসি জাতের ২২ হাজার ২’শ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। এ বছর প্রায় ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ধান নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে কৃষি বিভাগ।
বোড়াশী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো: ফোরকান মোল্যা জানান, এ বছর তিনি সোয়া তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাইব্রিডের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের ধান রোপন করেন। কিন্তু এসব গাছে ব্লাস্ট রোগ হওযায় ধান চিটা হয়ে গেছে। সেই সাথে ভাল জমিতে ইঁদুর গোড়া কেটে দেয়ায় ধান গাছ নষ্ট হচ্ছে গেছে। ফলে তিনি অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রেজাউল করিম দাঁড়িয়া বলেন, যে সব জমিতে ২৮ জাতের বোরো ধান রোপন করা হয়েছে যে সব ধানের গাছে শীষ আসার পর ধান ফুলে উঠলে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব জমি থেকে এক ছাটাকও ধান ঘরে তোলা যাবে না। কিন্তু ধান গাছ রোগে আক্রান্ত হলেও কৃষি কর্মকর্তারা কোন ধরনের পরামর্শ দেয়নি। ফলে ক্ষতির পরিমান বেশি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো: নূর আলম মোল্যা বলেন, আমরা যে ডিলারের কাছ থেকে ধান বীজ কিনেছি তারা কিছুই জানায়নি বীজ ভাল না খারাপ। বীজ খারাপ হওয়ায় ধান ফোলার পর রোগে আক্রান্ত হয়ে তা নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে কোন উপকার করতে পারবে না। এখন সরকার যদি কোন সাহায্য সহযোগীতা না করে তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহাব্বত আলী বলেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে বোরো-২৮ জাতের ধান রোপন করেছি। ধানের শীষ আসার সাথে সাথে তা পুড়ে গিয়ে চিটা হয়ে গেছে। এবছর একটা ধানও ঘরে তুলতে পারবো না। সারা বছর কি খেয়ে বাঁচবো সেই চিন্তায় আছি।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ: কাদের সরদার বলেন, এ বছর জেলায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। বেশিভাগ হাইব্রিড ধানের আবাদ হলেও উফসি জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। বোরো-২৮ জাতের ধান গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ জাতের গাছ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেসব জমিতে ব্লাস্ট রোগ হচ্ছে সেসব জমির ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। ব্লাস্ট রোগ হবার সাথে সাথে আমরা কৃষকদের ছত্রাকনাশক ঔষধ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি এবং উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমান নিরুপণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরী করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সরকারের উচ্চমহলে পাঠানো হবে। এরপর সরকার কোন প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে। #